Basic Computer

কম্পিউটারের প্রজন্ম কয়টি এবং প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য কি কি?

কম্পিউটার প্রজন্ম( Computer Generations)

কম্পিউটারের প্রজন্ম কয়টি তা জানতে নিম্নের কন্টেন্ট পড়ুন- কম্পিউটার আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে এর প্রযুক্তিগত উন্নতি কাজের গতি এবং আকৃতিগত পরিবর্তন বা বিবর্তন ঘটতে থাকে। এ বিবর্তন ও বিকাশের  এক একটি ধাপ কে প্রজন্ম বলে। কম্পিউটার শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে এটি নির্মাণ কাঠামো রূপে কাজ করে। বিবর্তনের অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে কম্পিউটার আজ বর্তমান অবস্থায়এসেছে।  প্রযুক্তিগত উন্নয়ন কম্পিউটার কে উন্নত থেকে উন্নততর করেছে। একটি প্রজন্ম থেকে আরেকটি প্রজন্মের পরিবর্তনের সময় সমস্যা গুলোর সমাধান করে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটিয়ে  এক একটি প্রজন্মের আত্মপ্রকাশ ঘটানো হয়। তবে নতুন বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি পুরানো বৈশিষ্ট্য গুলো থেকে যায়। নিম্নে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হল

কম্পিউটার প্রথম তৈরী হবার পর থেকে নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম তৈরীর পর থেকে কম্পিউটারের যন্ত্রাংশগুলির নানা উন্নতি, বিভিন্ন নতুন যন্ত্রাংশ তৈরী প্রভৃতির মাধ্যমে কম্পিউটার ধীরে ধীরে আধুনিক কম্পিউটারে রূপ নিয়েছে। শুরু থেকে আজকের আধুনিক কম্পিউটার তৈরীর বিবর্তনের এই দীর্ঘ সময়কে পাঁচটি প্রজন্মে ভাগ করা হয়।

কম্পিউটারের জেনারেশন: কম্পিউটারের জেনারেশন কে ৫ টি পর্যারে ভাগ করা যায়। যেমন-

১) প্রথম প্রজন্ম (১৯৪৬-১৯৫৯)

২) দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৫৯-১৯৬৫

৩) তৃতীয় প্রজন্ম (১৯৬৫-১৯৭১

৪) চতুর্থ প্রজন্ম (১৯৭১-বর্তমান)

৫) পঞ্চম প্রজন্ম (ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কম্পিউটার)

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার( First Generation Computer)[1940-56]

প্রথম প্রজন্মের  কম্পিউটারে ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হতো। হাজার হাজার ডায়োড, রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হতো বলে এরা আকারে অনেক বড় ছিল। কয়েকটি ঘর জুড়ে থাকতো  ঐসব কম্পিউটার, যা বর্তমানে অকল্পনীয় ।চালু অবস্থায় কম্পিউটার ভিশন গরম হয়ে যেত। তাই না পুড়ে যাবার জন্য মাঝে মাঝে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হতো।এগুলো ছিল সীমিত তথ্য ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং পরিচালনার জন্য অত্যধিক বিদ্যুৎ শক্তি প্রয়োজন হতো। ভাল্বের কার্যকালও খুব কম ।

এ কম্পিউটার গুলো ব্যয়বহুল হলেও কম নির্ভরযোগ্য ছিল।  কাজের গতি মন্থর। 1943 সালে নির্মিত সর্বপ্রথম সম্পুর্ণ ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার হল ENIAC( Electronic Numerical Integrator and Calculator) কম্পিউটার। এতে তৈরি করেন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার মূর স্কুল অব ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক জন মশলী (John Mauchly) এবং তার প্রকৌশলীর যে প্রেসপার ইকার্ট (J. Presper Eckert)। 1943 সালে এ কম্পিউটারের কাজ শুরু হয় এবং 1945 সালে এর কাজ শেষ হয়। আটলান্টিক মহাসাগরের ওপারে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী  ক্ষেপণাস্ত্রের পথ পরিমাপের জন্য দ্রুতগতির হিসাব যন্ত্রের প্রয়োজন উপলব্ধি করে ।লক্ষ্য স্থানে দূরত্বের উপর নির্ভর করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কোণ পরিবর্তন করতে হয়। এজন্য ENIAC(Electronic Numerical Integrator And Calculator) কম্পিউটারের জন্ম হয় ।1945 সালের শেষে বোস্টনে প্রথম আবির্ভূত হয় LBM-650। এটি ছিল এ প্রজন্মের ব্যাপকভাবে সমাদৃত কম্পিউটার ।

উদাহরণ-IBM-650,MARKII,ENIAC,EDVAC,EDSAC ইত্যাদি।  এসব কম্পিউটারে প্রথমে মেশিনের ভাষায় এবং পরে ১৯৫২-৫৩  সালে অ্যাসেম্বলি ভাষায় প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়।

গ্রাফিক্স ডিজাইন ফ্রিল্যান্সিং কোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

( First Generation Computer)[1940-56]


প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

(i) ভ্যাকুয়াম টিউব ও বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক বর্তনী ব্যবহা

(ii) ধীর গতিসম্পন্ন গণনাকারী যন্ত্র

(iii) আকারে অনেক বড়

(iv) পাঞ্চ কার্ড এর মাধ্যমে ইনপুট -আউটপুট ব্যবস্থা করা হয়

(v) মেশিন ভাষার নির্দেশ প্রদান

(vi) মেমোরি হিসেবে   ম্যাগনেটিক ড্রামের ব্যবহার।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার( Second Generation Computer)[1957-1963]


1948 সালে আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরি তে উইলিয়াম বি. শকলি(Wiliam B. Shokly), জন বার্ডিন (John Berdeen) এবং এইচ ব্রিটেন (H. Britain) সম্মিলিতভাবে ট্রানজিস্টর তৈরি করেন ।  এ ট্রানজিস্টার কম্পিউটারের উন্নতিতে বিপ্লব এনে দেয়। এ প্রজন্মের ভ্যাকুয়াম টিউব এর পরিবর্তে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হতো। ট্রানজিস্টর আবিষ্কার হওয়ার পর কম্পিউটার প্রযুক্তির জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়। এ প্রজন্মের কম্পিউটার গরম হত না। প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার থেকে এটি আকারে ছোট এবং কম বিদ্যুৎ খরচ হয়। এ প্রজন্মের কম্পিউটারের প্রথম  হাই লেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এর ব্যবহার শুরু হয় যেমন- FORTRAN(1956), ALGOL(19580), COBOL(1959)।এ প্রজন্মের একটি কম্পিউটার দিয়ে 1964 সালে বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহার সূচনা করা হয়। এই কম্পিউটারটি ঢাকার পরমাণু শক্তি কমিশন কেন্দ্রে সুদীর্ঘ কয়েক বছর চালু ছিল।

উদাহরণ: IBM-1401,CDC 1604,RCA-301,RCA 501,BCR 300,GE 200 Honey Well 200,1600,IBM 1620 ইত্যাদি।

( Second Generation Computer)[1957-1963]


দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

(i) ট্রানজিস্টর এর ব্যবহার শুরু হয়;

(ii) ম্যাগনেটিক কোর মেমোরির ব্যবহার ও সহায়ক মেমোরি হিসেবে ম্যাগনেটিক ডিস্কের  উদ্ভাবন;

(iii) উচ্চ গতিসম্পন্ন ও উন্নত মানের ইনপুট – আউটপুট ব্যবস্থার প্রচলন

(iv) মেশিন ভাষার পরিবর্তে উচ্চস্তরের ভাষার( যেমন-COBOL,FORTRAN,ALGOL ইত্যাদি )ব্যবহার;

(v) টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে ডাটা প্রেরণের ব্যবস্থা;

(vi) অধিক নির্ভরযোগ্যতা;

(vii) বাস্তবিক ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের শুরু।

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (Third Generation Computer)[1964-70]

রবার্ট নয়েস(Robert Noyce) ও জ্যাক কিলবি(Jack Kilby) প্রায় একই সময় পৃথকভাবে বড় সার্কিট ক্ষুদ্র করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ছোট সার্কিট কে আইসি (IC) বা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (Integrated Circuit) বলা হয়। এ প্রজন্মের কম্পিউটারে IC ব্যবহার করা হয় ।ফলে কম্পিউটারের আকার ও দাম কমে যায়। তবে গতি বেড়ে যায়। এ প্রজন্মে মিনি কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।এ প্রজন্ম থেকেই কম্পিউটারের সাথে মনিটর ব্যবহার শুরু হয়। সাথে সাথে কম্পিউটারের স্মৃতি ব্যবস্থারও  উন্নতি ঘটে। তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে ভাষার উন্নতিতে প্রোগ্রামে দক্ষতা অর্জন সহজতর অপারেটিং সিস্টেম এ প্রজন্মের কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়। এ প্রজন্মের কম্পিউটারে প্রিন্টার এর প্রচলন শুরু হয়।

উদাহরণ: IBM360, IBM370, PDP-8,PDP-II ইত্যাদি

(Third Generation Computer)[1964-70]


তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

(i) কম্পিউটারে একীভূত বর্তনীর প্রচলন

(ii) আকৃতিতে ছোট দাম কম এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি

(iii) মুদ্রিত আকারে  লাইন প্রিন্টারের ব্যবহার

(iv) আউটপুট হিসেবে ভিডিও ডিসপ্লে  ইউনিটের প্রচলন

(v) উচ্চতর ভাষার বহুল ব্যবহার

(vi) মিনি কম্পিউটারের উদ্ভব

(vii) অর্ধপরিবাহী স্মৃতির ব্যবহার

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার ( Fourth Generation Computer)[1971-বর্তমান]

1971 সাল থেকে চতুর্থ প্রজন্ম শুরু হয়েছে বলে ধরা হয়। ।LSI(Large Scale Integration) ও VLSI(Very Large Scale Integration) মাইক্রোপ্রসেসর এবং সেমিকোন্ডাক্টর মেমোরি (Semi- Conductor memory) দিয়ে এ প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরি হয়। VLSIএর মাইক্রোপ্রসেসর নিয়ে গঠিত ছোট কম্পিউটার  কে মাইক্রো কম্পিউটার বলে। আমেরিকার জন ব্ল্যাংকেন বেকার 1971 সালে কেনব্যাক প্রথম মাইক্রো কম্পিউটার তৈরি করেন । পরে 1977 সালে মাইক্রোকম্পিউটার পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে ।1981 সালে আইবিএম কোম্পানি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রথম কম্পিউটার তৈরি শুরু করে। চতুর্থ প্রজন্ম থেকে মাইক্রো কম্পিউটার চালু হয় ।ফলে কম্পিউটারের আকার ছোট হয় ।তবে কম্পিউটারের গতি বেড়ে যায়। এ প্রজন্মের কম্পিউটার স্মৃতি উদ্ভাবিত হতে থাকে ,যেমন- ROM (Read Only Memory), PROM,EPROM। কম্পিউটারের C Progarmming Language এবংDOS ,Windows,Unix Operating System এ প্রজন্মের কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয়েছে ।

উদাহরণ IBM 3033, IBM 4300, IBM S/36 , Sharp PC-1211, Apple II, Pentiun 1-4, ইত্যাদি।

( Fourth Generation Computer)[1971-বর্তমান]


চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

(i) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার( Artificial  Intelligence) ব্যবহার;

(ii) বহু মাইক্রোপ্রসেসর এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ বিশিষ্ট একীভূত বর্তনীর ব্যবহার;

(iii) ট্রানজিস্টর গুলোতে অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার;

(iv) উন্নত মেমোরি তথা ম্যাগনেটিক বাবল মেমোরির ব্যবহার;

(v) মানুষের কণ্ঠস্বর এর মাধ্যমে প্রদত্ত নির্দেশের অনুধাবন;

(vi) ডাটা ধারণ ক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি;

(vii) অত্যান্ত শক্তিশালী ও উচ্চ গতি সম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর এর ব্যবহার;

(viii) সুপার কম্পিউটারের উন্নয়ন।

পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার (Fifth Generation Computer)

এ প্রজন্মের কম্পিউটার চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার হতে অধিক শক্তিশালী। Super VLSI ( Very Large Scale Integration) চিপ ও অপটিক্যাল ফাইবার এর সমন্বয়ে এ প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরি ।এ ধরনের কম্পিউটারে অত্যন্ত শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর ও প্রচুর পরিমাণ ডাটা ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন করার গবেষণা চলছে ।বর্তমানে চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার ছাড়াও পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় ।পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের মানুষের কণ্ঠস্বর সনাক্ত করার ক্ষমতা ও কন্ঠে নির্দেশ বুঝতে পেরে কাজ করার ক্ষমতা থাকবে। পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থারউন্নতি সাধিত হয়েছে।

(Fifth Generation Computer)


পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

(i) কৃত্রিম বুদ্ধি সম্পন্ন থাকবে;

(ii) তথ্য ধারণ ক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি;

(iii) অধিক সমৃদ্ধশালী মাইক্রোপ্রসেসর;

(iv) স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ গ্রহণযোগ্য শব্দ দিয়ে কম্পিউটারের সাথে সংযোগ;

(v) বিপুল শক্তি সম্পন্ন সুপার কম্পিউটারের উন্নয়ন;

(vi) চৌম্বক কোন স্মৃতির ব্যবহার;

(vii) প্রোগ্রাম সামগ্রীর উন্নতি ইত্যাদি।

আরও কন্টেন্ট পড়ুন ..

3 thoughts on “কম্পিউটারের প্রজন্ম কয়টি এবং প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য কি কি?

  • I’m thoroughly captivated by your profound understanding and excellent way of expressing complex ideas. The knowledge you share clearly stands out in every piece you write. It’s clear that you invest a great deal of effort into delving into your topics, and this effort is well-appreciated. Thank you for sharing this valuable knowledge. Keep up the great work! https://www.elevenviral.com

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *